ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর নামকরণ করেছে ওমান। আরবিতে যার অর্থ বালি। অবশ্য এই নামে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে একটি শহরও রয়েছে। এবার ধেয়ে আসতে পারে সেই ‘রেমাল’। ঘূর্ণিঝড়টি কতটা ভয়াবহ হবে, তা স্পষ্ট করেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে— ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে সাগরের ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত ন্যূনতম তাপমাত্রা থাকতে হয় ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সাগরের পানির বর্তমান তাপমাত্রা রয়েছে ৩০-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, যা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য যথেষ্ট।
সংস্থাটি বলছে, বঙ্গোপসাগর তো বটেই, চলতি মাসে আরব সাগরেও একটি নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২২ মে নাগাদ আরব সাগর এবং ২৩ মে নাগাদ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। কারণ নিম্নচাপের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যে শর্তগুলো রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় সব শর্তই বিরাজমান রয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কার্যক্রম তৈরি হতে পারে আগামী সপ্তাহেই, যা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। সংস্থাটি বলছে— আগামী ২৩ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যা ২৪ মের পরে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পরে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, যা এগিয়ে যেতে পারে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে।
আবহাওয়া অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা চলতি মাসের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি এখন শক্তি সঞ্চার করছে। আগামী ২০ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। সেটি সোজা উত্তর দিকে শক্তিবৃদ্ধি করবে। ২৪ মে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ২৫ মে সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেছেন, এখন পর্যন্ত এটার মুভমেন্টটা ভারতের উড়িষ্যার দিকে। তৈরি না হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশে আঘাত হানবে কিনা, তবে ২৭ তারিখের দিকে উপকূলে আসতে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয়নি। ফলে সাগরটিতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ২০ মের পরে সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এটি খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৪টি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টির উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।
বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে এই গবেষক জানান, আবহাওয়ার প্রায় সব মডেলই দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা নির্দেশ করছে, যা আগামী ২১ মে থেকে ২৩ মের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে। এরপর ২৪ মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জন করতে পারে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল যদি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা রাজ্যের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত করে, তবে স্থলভাগে আঘাতের সম্ভব্য সময় হবে ২৫ মে সন্ধ্যার পর থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে। আর যদি বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করে, তবে সম্ভাব্য সময় হবে ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে ২৭ মে সন্ধ্যার মধ্যে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২১ মে প্রবল শক্তি নিয়ে দেশের উপকূলে আঘাত হানে আয়লা। সে সময় ব্যাপক ক্ষতি হয় দেশের কৃষকদের। ২০২০ সালের ২০ মে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবেও ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে সুন্দরবনের কারণে রক্ষা পাওয়া গেছে সে যাত্রায়। এবার সেই আয়লা-আম্ফানের মাসেই ধেয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।